নকশি কাঁথা হলো সাধারণ কাঁথার উপর নানা ধরণের নকশা করে বানানো বিশেষ প্রকারের কাঁথা। নকশি কাঁথা শত শত বছরের পুরনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেরসংস্কৃতির একটা অংশ।নকশি কাঁথা ভারত ও বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ। সাধারণত পুরাতন কাপড়ের পাড় থেকে সুতা তুলে অথবা তাঁতীদের থেকে নীল, লাল, হলুদ প্রভৃতি সুতা কিনে এনে কাপড় সেলাই করা হয়।ঘরের মেঝেতে পা ফেলে পায়ের আঙ্গুলের সঙ্গে কাপড়ের পাড় আটকিয়ে সূতা খোলা হয়। এই সূতা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য রেখে দেয়া হয়। সাধারণ কাঁথা সেলাইয়ের পর এর উপর মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুঁটিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন নঁকশা যার মধ্যে থাকে ফুল, লতা, পাতা ইত্যাদি। পুরো বাংলাদেশেই নকশি কাঁথা তৈরি হয়, তবে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ফরিদপুর ও যশোর নকশি কাঁথার জন্য বিখ্যাত। ২০০৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নকশি কাঁথার ভৌগোলিক স্বীকৃতি পায়।
কাঁথা শব্দটির কোন উৎস স্পষ্টভাবে জানা যায় নি।সঠিকভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় কাঁথা শব্দটি পূর্বে উচ্চারিত হত "খেতা" বলে।বাংলায় ধানের ক্ষেতকে অনেক সময় "খেত" বলা হয়। নিয়াজ জামানের মতে, কাঁথা শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃতি শব্দ "কঁথা" হতে। "কঁথা" শব্দটির বাংলা হলো ত্যানা। বা কাপড়ের টুকরা।
নকশি কাঁথা শব্দের উৎসঃ
কাঁথা শব্দটির কোন উৎস স্পষ্টভাবে জানা যায় নি।সঠিকভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় কাঁথা শব্দটি পূর্বে উচ্চারিত হত "খেতা" বলে।বাংলায় ধানের ক্ষেতকে অনেক সময় "খেত" বলা হয়। নিয়াজ জামানের মতে, কাঁথা শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃতি শব্দ "কঁথা" হতে। "কঁথা" শব্দটির বাংলা হলো ত্যানা। বা কাপড়ের টুকরা।
ঐতিহ্যঃ
অন্যান্য লোকশিল্পের মতো কাঁথার উপর দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস, আবহাওয়া, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক প্রভাব আছে।সম্ভবত প্রথমদিকে কাঁথা ছিল জোড়া তালি দেওয়া কাপড়। পরবর্তীতে এটি থেকেই নকশি কাঁথার আবির্ভাব।
নির্মাণশৈলীঃ
গ্রামাঞ্চলের নারীরা পাতলা কাপড়, প্রধানত পুরানো কাপড় স্তরে স্তরে সজ্জিত করে সেলাই করে কাঁথা তৈরি করে থাকেন। কাঁথা মিতব্যয়ীতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, এখানে একাধিক পুরানো জিনিস একত্রিত করে নতুন একটি প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয়। কাঁথা তৈরির কাজে পুরানো শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁথার পুরুত্ব কম বা বেশী হয়। পুরুত্ব অনুসারে তিন থেকে সাতটি শাড়ি স্তরে স্তরে সাজিয়ে নিয়ে স্তরগুলোকে সেলাইয়ের মাধ্যমে জুড়ে দিয়ে কাঁথা তৈরি করা হয়। সাধারণ বা কাঁথাফোঁড়ে তরঙ্গ আকারে সেলাই দিয়ে শাড়ীর স্তরগুলোকে জুড়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন রঙের পুরানো কাপড় স্তরীভূত করা থাকে বলে কাঁথাগুলো দেখতে বাহারী রঙের হয়। সাধারণত শাড়ীর রঙ্গীন পাড় থেকে তোলা সুতা দিয়ে কাঁথা সেলাই করা হয় এবং শাড়ীর পাড়ের অনুকরণে কাঁথাতে নকশা করা হয়। তবে কোন কোন অঞ্চলে (প্রধানত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায়) কাপড় বোনার সুতা দিয়েও কাঁথাতে নকশা করা হয়ে থাকে। সাধারণ কাঁথা কয়েক পাল্লা কাপড় কাঁথাফোঁড়ে সেলাই করা হলেও এই ফোঁড় দেয়ার নৈপুণ্যের গুণে এতেই বিচিত্র বর্ণের নকশা, বর্ণিল তরঙ্গ ও বয়নভঙ্গির প্রকাশ ঘটে। নকশার সাথে মানানোর জন্য বা নতুন নকশার জন্য কাঁথার ফোঁড় ছোট বা বড় করা হয় অর্থাৎ ফোঁড়ের দৈর্ঘ্য ছোট-বড় করে বৈচিত্র্য আনা হয়। উনিশ শতকের কিছু কাঁথায় কাঁথাফোঁড়ের উদ্ভাবনী প্রয়োগকে কুশলতার সাথে ব্যবহার করার ফলে উজ্জ্বল চিত্রযুক্ত নকশা দেখা যায়। কাঁথাফোঁড়ের বৈচিত্র্য আছে এবং সেই অনুযায়ী এর দুটি নাম আছেঃ পাটি বা চাটাই ফোঁড় এবং কাইত্যা ফোঁড়।
বেশিরভাগ গ্রামের নারী এই শিল্পে দক্ষ। সাধারণত গ্রামের মহিলারা তাদের অবসর সময় নকশি কাঁথা সেলাই করে থাকেন। এক একটি কাঁথা সেলাই করতে অনেক সময়, এমনকি ১ বছর সময়ও লেগে যায়। নতুন জামাইকে বা নাদ বউকে উপহার দেয়ার জন্য নানী-দাদীরা নকশি কাঁথা সেলাই করে থাকেন। এক একটি কাঁথা সেলাইয়ের পিছনে অনেক হাসি-কান্নার কাহিনী থাকে। বিকেল বেলা বা রাতের খাবারের পর মহিলারা একসাথে বসে গল্প করতে করতে এক একটি কাঁথা সেলাই করেন। তাই বলা হয় নকশি কাঁথা এক একজনের মনের কথা বলে। এটি মূলত বর্ষাকালে সেলাই করা হয়। একটা প্রমাণ মাপের কাঁথা তৈরিতে ৫ থেকে ৭ টা শাড়ী দরকার হয়। আজকাল পুরাতন সামগ্রীর বদলে সূতির কাপর ব্যবহার করা হয়। ইদানীং কাঁথা তৈরিতে পুরাতন কাপড়ের ব্যবহার কমে গেছে।
মূলত নকশা করার পূর্বে কোন কিছু দিয়ে এঁকে নেওয়া হয়। তারপর সুঁই-সুতা দিয়ে ওই আঁকা বরাবর সেলাই করা হয়। কাঁথায় সাধারণত মধ্যের অংশের নকশা আগে করা হয় এবং ধীরে ধীরে চারপাশের নকশা করা হয়। আগে কিছু কাঁথার নকশা আঁকানোর জন্য কাঠের ব্লক ব্যবহার করা হত, এখন ট্রেসিং পেপার ব্যবহার করা হয়।
সূত্রঃ Wikipedia